তা হলো নামাজের মৌলিক অংশগুলো, যা কোনো অবস্থাতেই তরক করা চলে না। অপারগতা ছাড়া এগুলো ছুটে গেলে দায়মুক্ত হওয়া যায় না, হোক তা ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা ভুলে।
প্রথমত: নামাজের রুকনসমূহ
১- সক্ষম ব্যক্তির ফরয নামাজে কিয়াম তথা দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়
২- কিরাত
৩- রুকু
৪- সাত অঙ্গের ওপর সিজদা করা
৫- শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ পরিমাণ বসা
৬- বিভিন্ন রুকনের মাঝে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা।
৭- নামাজ পরিপূর্ণরূপে আদায় করা
যে ব্যক্তি কোনো রুকন ছেড়ে দিল তার কি করণীয়?
১-ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো রুকন ছেড়ে দিলে নামাজ বাতিল হয়ে যাবে এবং পুনরায় তা আদায় করতে হবে।
২-ভুলবশত ছেড়ে দিলে এর দু অবস্থা হতে পারে:
ক- যদি ভুলবশত কোনো রুকন ছুটে যায় এবং দ্বিতীয় রাকাতে গিয়ে ঠিক একই রুকন আদায়ের মূহুর্তে তা মনে হয়, তাহলে প্রথম রাকাত বাতিল বলে গণ্য হবে এবং দ্বিতীয় রাকাত এর স্থলাভিষিক্ত হবে। এ জন্যে সিজদায়ে সাহু দেয়া আবশ্যক হবে।
এর উদাহরণ: এক ব্যক্তি দ্বিতীয় রাকাতে সিজদা দেয়ার সময় মনে করতে পারল যে প্রথম রাকাতে সে দ্বিতীয় সিজদা দিতে ভুলে গিয়েছে। এমতাবস্থায় এই রাকাতকে প্রথম রাকাতের স্থলে ধরবে এবং প্রথম রাকাতকে বাতিল বলে গণ্য করবে।
খ - আর যদি ভুলে যাওয়া রুকন দ্বিতীয় রাকাতে সে রুকনে যাওয়ার পূর্বেই স্মরণ করতে পারে, তাহলে স্মরণ হওয়া মাত্রই সে রুকনটি আদায় করে নিতে হবে।
এর উদাহরণ: এক ব্যক্তি রুকু করতে ভুলে গেল। সে যখন কিরাত পড়া শেষ করে সিজদায় গেল তখন স্মরণ হলো যে রুকু করতে সে ভুলে গিয়েছে। এমতাবস্থায় সাথে সাথে দাঁড়িয়ে রুকু করে নেয়া আবশ্যক হবে। এরপর অবশিষ্ট নামাজ পূরণ করবে।
দ্বিতীয়ত: নামাজেরওয়াজিবসমূহ
১. আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করা।
২. ফরয নামাজের প্রথম দু রাকাতে এবং বেতর ও নফল নামাজের সকল রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়া।
৩. ছোট একটি সূরা অথবা কমপক্ষে ছোট ছোট তিন আয়াত ফরয নামাজের প্রথম দু রাকাতে এবং বেতর ও নফল নামাজের সকল রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে মিলানো।
৪. অন্য সূরা পড়ার পূর্বে সূরা ফাতিহা পড়া।
৫. সিজদার সময় কপালের সাথে নাকও রাখা।
৬. নামাজের আরকানসমূহ ধীরস্থিরভাবে আদায় করা, যেমন: রুকু-সিজদা ইত্যাদি সুস্থিরভাবে করা এবং রুকু-সিজদা থেকে উঠার পর সুস্থির হওয়া ইত্যাদি।
৭. কিরাআত ও রুকুর মাঝে এবং প্রতি রাকাআতে যা দুইবার করে আদায় করা হয় এসবের মাঝে তরতীব রক্ষা করা।
৮. তিন রাকাত অথবা চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের প্রথম বৈঠক।
৯. প্রথম বৈঠকে তাশাহ্হুদ পাঠ করা।
১০. শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ পাঠ করা।
১১. প্রথম তাশাহ্হুদের পর দেরি না করে তৃতীয় রাকাআতের জন্য দাঁড়ানো।
১২. না ফজরের দুই রাকাত, মাগরিব ও এশার প্রথম দুই রাকাত, জুমআ, দুই ঈদ, তারাবীহ ও রমজানের বেতরে প্রকাশ্যে কিরাআত পড়া। মাজ শেষ করার সময় সালাম বলা।
১৩. ফজররে দুই রাকাত, মাগরবি ও এশার প্রথম দুই রাকাত, জুমআ, দুই ঈদ, তারাবীহ ও রমজানরে বতেরে প্রকাশ্যে করিাআত পড়া।
১৪. যোহর ও আসরের নামাজে, মাগরিবের তৃতীয় রাকাআতে, এশার শেষ দুই রাকাআতে এবং দিনের নফল নামাজে ইমাম ও একাকী নামাজ আদায়কারীর ক্ষেত্রে গোপনীয়ভাবে কিরাত পড়া।
১৭. মুক্তাদির কিরাত না পড়া এবং জামাতের নামাজে ইমামের অনুসরণ করা।
১৮. দ্বিতীয় সিজদা প্রথম সিজদার পর বিলম্ব না করে আদায় করা।
ওয়াজিব ছুটে গেলে মুসল্লীকে কি করতে হবে?
১ - যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোনো ওয়াজিব ছেড়ে দেবে তার নামাজ বাতিল বলে গণ্য হবে এবং তাকে পুনরায় নামাজ আদায় করতে হবে।
২ - যে ব্যক্তি ভুলক্রমে কোনো ওয়াজিব ছেড়ে দেবে তার নামাজ শুদ্ধ বলে গণ্য হবে, তবে তার জন্য সিজদায়ে সাহু দেয়া আবশ্যক হবে।
তৃতীয়ত: নামাজের সুন্নতসমূহ
নামাজের ফরয ও ওয়াজিব ব্যতীত অবশিষ্ট আমলগুলো সুন্নত অথবা মুস্তাহাব যা ছুটে গেলে নামাজের শুদ্ধতায় কোনো প্রভাব পড়ে না এবং এ সবের জন্য সিজদায়ে সাহু দেওয়াও আবশ্যক নয়।
নামাজের সুন্নতসমূহ দুই প্রকার:
নামাজের সুন্নতসমূহ নিম্নরূপ
১. তাহরীমার জন্য পুরুষের ক্ষেত্রে কান বরাবর এবং স্বাধীন নারীর ক্ষেত্রে কাঁধ বরাবর হাত উঠানো।
২. আঙ্গুলগুলো স্বাভাবিকভাবে রাখবে, পরস্পর মিলিয়ে রাখবে না আবার অতিমাত্রায় ফাঁক করেও রাখবে না।
৩. মুক্তাদীর তাহরীমা ইমামের তাহরীমার সাথে সাথে হওয়া।
৪. পুরুষের ক্ষেত্রে ডান হাত বাম হাতের ওপর নাভির নিচে রাখা। আর নারীর ক্ষেত্রে সিনার ওপর রাখা।
৫. নামাজ শুরুর দুআ অর্থাৎ ছানা পড়া, কিরাত পড়ার উদ্দেশ্যে সুরা ফাতিহার পূর্বে প্রতি রাকাতের শুরুতে আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ বলা।
৬. ছানা, আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, সুরা ফাতিহার পর আমীন বলা এবং রুকু থেকে উঠার পর রাব্বানা ওয়ালাকাল হামদ ইত্যাদি গোপনে বলা।
৭. তাহরীমার শুরু এবং শেষে মাথা সোজা রাখা, নিচু না করা।
৮. ইমামের ক্ষেত্রে তাকবীর, সামি-আল্লাহু লিমান হামিদাহ এবং সালাম প্রকাশ্য আওয়াজে বলা।
৯. দাঁড়ানো অবস্থায় দু পায়ের মধ্যখানে চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক রাখা।
১০. ফাতিহার পর ফজর ও যোহরে তিওয়ালে মুফাস্সাল, আসর ও এশার সময় আওসাতে মুফাস্সাল এবং মাগরিবের সময় কিসারে মুফাসসাল থেকে সূরা পড়া।
১১.সকল নামাজের প্রথম রাকাতে দ্বিতীয় রাকাআতের তুলনায় দীর্ঘ কিরাআত পড়া। রুকুতে যাওয়ার সময়, সিজদায় যাওয়া ও উঠার সময় তাকবীর দেয়া, তবে রুকু থেকে উঠার সময় সামি-আল্লাহু লিমান হামিদাহ বলা। আর রুকুতে গিয়ে তিনবার سبحان ربي العظيم বলা এবং সিজদায় গিয়ে তিনবার سبحان ربي الأعلى বলা।
১২. রুকুতে গিয়ে দু হাতে দু হাটু ধরা।
১৩. রুকুতে পুরুষরা আঙ্গুল ফাঁক করে রাখবে। আর নারীরা তা করবে না।
১৬. সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে দু হাঁটু, এরপর দু হাত, এরপর চেহারা রাখবে। আর সিজদা থেকে উঠার সময় ঠিক এর উল্টোটা করবে।
১৭. দুই করতলের মাঝখানে সিজদা করবে। আর হাত থাকবে কাঁধ বরাবর।
১৮. পুরুষের পেট ও ঊরুর মাঝে দূরত্ব থাকা। আর দুই কনুই পাঁজর থেকে দূরে রাখা এবং দুই
৮. বাহু জমিন থেকে র্ঊধ্বে রাখা।
৯. নারীর পেট ও ঊরু একসাথে লাগিয়ে রাখা।
১০. দুই সিজদার মাঝে বসা এবং তাশাহ্হুদের সময় দুই হাত দুই ঊরুর ওপর রাখা।
১১. দুই সিজদা ও তাশাহ্হুদের সময় বাম পা বিছিয়ে তার ওপর বসা এবং ডান পা দাঁড় করিয়ে রাখা। পায়ের আঙ্গুল কিবলামুখী রাখা।
১২. নারীর তাওয়াররুক অর্থাৎ নিতম্বের ওপর বসা এবং একটি ঊরু জমিনের ওপর রাখা। বাম পা ডান পায়ের নিচ দিয়ে নিয়ে বাইরের দিকে রাখা; কেননা এরূপ করাই নারীর গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য অধিক উপযোগী।
১৩. শুধু কালেমায়ে শাহাদাত পড়ার সময় তর্জনী দিয়ে ইশারা দেয়া। «লা ইলাহা» বলার সময় উঠানো এবং «ইল্লাল্লাহ» বলার সময় নামানো।
১৪. প্রথম দুই রাকাতের পরবর্তী রাকতগুলোয় সূরা ফাতিহা পড়া।
১৫. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর শেষ বৈঠকে দরুদ পড়া।
১৬. দরুদ পড়ার পর দুআ করা কুরআন-সুন্নাহর শব্দের সাথে মিল রেখে।
১৭. ডানে বামে সালাম ফেরানোর সময় ইমাম তার পেছনে থাকা মুসল্লী, ফেরেশতা নেককার জিনদের নিয়ত করা
১৯. একাকী নামাজ আদায়কারী শুধু ফেরেশতাদের প্রতি সালাম প্রদানের নিয়ত করবে।
২০. দ্বিতীয় সালামের সময় প্রথম সালামের তুলনায় আওয়াজ একটু নিচু করা।
২১. ইমামের সালামের সাথে সাথে সালাম দেয়া।
২২. ডান দিকে আগে সালাম দেয়া।
২৩. মাসবুক ব্যক্তি ইমাম দ্বিতীয় সালাম থেকে ফারেগ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে, যাতে সে নিশ্চিত হতে পারে যে ইমামের ওপর কোনো সিজদায়ে সাহু নেই।
নামাজের আদবসমূহ
১. তাকবীরে তাহরীমার সময় পুরুষ তার করতল জামার ভিতর থেকে বের করবে; কেননা এতে অধিক তাওয়াযু প্রকাশ পায়। পক্ষান্তরে নারী এরূপ করবে না; কেননা নারী তার হাত বের করতে গেলে তার বাহুর কিছু অংশ বের হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
২. মুসল্লী দাঁড়ানো অবস্থায় তার সিজদার জায়গার প্রতি দৃষ্টি দেবে।
হাই তোলার সময় মুখ চেপে ধরা।যথাসাধ্য হাঁচি থামাতে চেষ্টা করা।
ইকামতের সময় حي على الفلاح বলার মুহূর্তে ইমাম ও মুক্তাদী সবাইকে দাঁড়িয়ে যাওয়া।