দান-সদকা ও আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়: গুরুত্ব ও ফজিলত
80216
নফল সদকা
যা বাধ্যতামূলক যাকাত ও ওয়াজিব সদকা ব্যতীত আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশে প্রদান করা হয়।
এ সংজ্ঞার দ্বারা সদকার বলয় থেকে হাদিয়া ও উপঢৌকন বের হয়ে যাচ্ছে, যা মিল-মহব্বত ধরে রাখা ও বাড়ানোর উদ্দেশে একে অপরকে দিয়ে থাকে। এটা সদকার অন্তর্ভুক্ত নয় যার সাথে কিছু শরয়ী বিধিমালার সম্পর্ক রয়েছে।
নফল সদকার হুকুম
নফল সদকা সবসময় দেয়া উত্তম। বিশেষ করে যখন প্রয়োজন দেখা দেয়। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআন ও সুন্নতে রাসূলে অনেক উৎসাহবেঞ্জক বাণী এসেছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:
{কে আছে, যে আল্লহকে উত্তম ঋণ দেবে, ফলে তিনি তার জন্য বহুগুণে বাড়িয়ে দেবেন?} [সূরা আল বাকারা:২৪৫]
আবু হুরায়রা বাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদকা করে - আর আল্লাহ হালাল ব্যতীত অন্যকিছু গ্রহণ করেন না - আল্লাহ তাআলা তা তাঁর ডান হাতে গ্রহণ করেন এরপর তিনি তা লালন করেন, যেমন তোমাদের কেউ তার ঘোড়ার বাচ্চাকে লালন করে, এমনকি একসময় সে সদকা পাহাড়তুল্য হয়ে যায়।’(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
যে ব্যক্তি গোপনে সদকা দেয় তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওই সাত জনের মধ্যে হিসাব করেছেন যাদেরকে আল্লাহ তাআলা তার ছায়ায় ছায়া দিবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত অন্যকোনো ছায়া থাকবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘এবং এমন ব্যক্তি যে সদকা করল, অতঃপর তা গোপন করল, এমনকি তার বাম হাত জানল না, তার ডান হাত কি দান করছে।’ (বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
{হে মুমিনগণ, তোমরা খোঁটা ও কষ্ট দেয়ার মাধ্যমে তোমাদের সদকা বাতিল করো না।} [সূরা আল বাকারা:২৬৪]
মুস্তাহাব আদব
ক. যে সকল আত্মীয়-স্বজনের ব্যয়ভার বহন করতে হয় না, সে সকল আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে যারা অভাবী, তাদেরকে সদকা দেয়া একজন মুসলমানের জন্য মুস্তাহাব, যেমন চাচা, মামা, স্ত্রী কর্তৃক দরিদ্র স্বামীকে সদকা প্রদান ইত্যাদি। অন্যদেরকে সদকা দেয়ার চেয়ে এদেরকে সদকা দেয়া উত্তম। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
(يَتِيمٗا ذَا مَقۡرَبَةٍ ١٥ ) [البلد:51]
{ইয়াতীম আত্মীয়স্বজনকে} [ সূরা আলবালাদ:১৫]
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘নিশ্চয় মিসকীনকে সদকাদান একটি সদকা, আর আত্মীয়কে দানে রয়েছে দুটি: সদকা ও আত্মীয়তা-বন্ধন রক্ষা।
খ. সদকার জন্য সম্পদের হালাল ও ভালো অংশ এবং ব্যক্তির কাছে যা প্রিয় তা বেছে নেয়া। ইরশাদ হয়েছে :
{তোমরা কখনো ছাওয়াব অর্জন করতে পারবে না, যতণ না ব্যয় করবে তা থেকে, যা তোমরা ভালবাস।} [সূরা আলে ইমরান:৯২]
গ. সংগোপনে সদকা প্রদান করা; কেননা এ প্রক্রিয়া ইখলাসের নিকটতম এবং রিয়া ও সুনাম কুড়ানো থেকে দূরতম। উপরন্তু তা দরিদ্র ব্যক্তিকে সম্মান করার ক্ষেত্রেও একটি উত্তম পন্থা। আল্লাহ তাআলা বলেন:
{তোমরা যদি সদাকা প্রকাশ কর, তবে তা উত্তম। আর যদি তা গোপন কর এবং ফকীরদেরকে তা দাও, তাহলে তাও তোমাদের জন্য উত্তম} [সূরা আল বাকারা:২৭১]
যদি সদকা প্রকাশ করায় কোনো দীনী স্বার্থ থাকে, যেমন অন্যদেরকে উৎসাহিত করা, তাহলে প্রকাশ্যে সদকা করাই উত্তম। তবে এ ব্যাপারে নিজের নিয়তের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে এবং নিয়ত যাতে কলুষমুক্ত থাকে সে ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে।
ঘ. সামর্থ্যানুযায়ী সদকা করা, হোক তা সামান্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা খেজুরের একাংশ দান করে হলেও আগুন থেকে বাঁচো।’(বর্ণনায় বুখারী)
{তাদের সম্পদ থেকে সদকা নাও। এর মাধ্যমে তাদেরকে তুমি পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে।} [ সূরা তাওবা:১০৩]
২ - নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ ; কেননা তাঁর একটি অবিচ্ছেদ্য গুণ ছিল দান-খয়রাত করা। আর তিনি এমন দান করতেন যারপর আর দারিদ্র্যের ভয় থাকত না। তিনি বিলাল রাযি. কে বলেছেন, ‘হে বিলাল তুমি সদকা করো, আরশের মালিক তোমার সম্পদ কমিয়ে দেবেন এ আশঙ্কা করোনা।’(বর্ণনায় বাযযার)
৩ - ব্যক্তি যা ব্যয় করবে আল্লাহ তাকে এর পরিবর্তে রিযক দেবেন। আর সদকা দ্বারা মানুষের আত্মোন্নতি ঘটে। আল্লাহ তাআলা বলেন :
{আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিয্কদাতা।}[সূরা সাবা:৩৯]
৪ - বেচা- কেনার ভুল থেকে সম্পদকে পবিত্র করা। কায়েস ইবনে আবি গারাযা রযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে আমাদেরকে দালাল বলা হতো। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের পাশ দিয়ে গেলেন এবং এর থেকেও উত্তম নামে আমাদেরকে সম্বোধন করলেন। তিনি বললেন, ‘হে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, নিশ্চয় ব্যবসায় অহেতুক কথা ও কসম এসে যায়, অতঃপর তোমরা তা সদকা দ্বারা মিশ্রিত করো [অর্থাৎ তার কাফফরা প্রদান করো]’(বর্ণনায় আবু দাউদ)
৫ - ছাওয়াব অর্জন ও গুনাহের কাফফারা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদকা করে - আর আল্লাহ হালাল ব্যতীত অন্যকিছু গ্রহণ করেন না - আল্লাহ তাআলা তা তাঁর ডান হাতে গ্রহণ করেন এরপর তিনি তা লালন করেন, যেমন তোমাদের কেউ তার ঘোড়ার বাচ্চাকে লালন করে, এমনকি একসময় সে সদকা পাহাড়তুল্য হয়ে যায়।’(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
৬ - মৃত্যুর পর সদকায়ে জারিয়ার দ্বারা মুসলমানের উপকার লাভ
আবু হুরায়রা রাযি. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন মানুষ মরে যায় তখন তার আমাল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিন প্রকার ব্যতীত: সদকায়ে জারিয়া অথবা এমন ইলম যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় অথবা সৎ সন্তান যে তার জন্য দুআ করে।’(বর্ণনায় মুসলিম)
দ্বিতীয়ত: সামাজিক উপকার
১- সদকা যাকাতের সামাজিক মিশনকে পূর্ণতা দান করে।
২- সমাজে পারিস্পরিক সহায়তা, সহযোগিতা, স্থিতিশীলতা ও মিল-মহব্বত কায়েম করে।